‘কাগজে বাস্তবায়িত’ ঘাস চাষ প্রকল্প : হাওরের কৃষক কি পেলেন?
- আপলোড সময় : ১৯-১১-২০২৫ ০৪:০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-১১-২০২৫ ০৪:০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
হাওরাঞ্চলের কৃষি ও প্রাণিস¤পদ খাতের উন্নয়ন দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের জীবিকা নির্ভর করে গবাদিপশু, কাঁচা ঘাস ও মৌসুমী কৃষির উপর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাস্তবতার সঙ্গে বেমানান পরিকল্পনা এবং মাঠপর্যায়ে দুর্বল তদারকির কারণে অনেক সময় বড় বড় সরকারি প্রকল্পও মাঠে সফলতা পায় না। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ‘ঘাস চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প’ তার উদাহরণ।
১১৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাগজে-কলমে সব কিছুই আছে, ঘাস চাষ, জার্মপ্লাজম নার্সারি, সাইলেজ প্রযুক্তি, হাজার হাজার কৃষকের প্রশিক্ষণ, এমনকি ৭৭ হাজার একর ঘাস চাষেরও হিসাব রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত কৃষকদের অনেকে দেশে নেই, কেউ জানেনই না তিনি ‘ঘাস চাষী’, কেউ পেয়েছেন শুধু প্রশিক্ষণ বা কিছু উপকরণ কিন্তু মাঠে ঘাস চাষ নেই।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, হাওরের বিশেষ ভূপ্রকৃতির কথা বিবেচনায় না রেখেই এই প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছিল। বছরের অর্ধেকের বেশি সময় পানির নিচে থাকা ভূমিতে নিয়মিত ঘাস চাষ বাস্তবসম্মত নয় - এটা প্রকল্পের শুরুতেই বিবেচনা করা উচিত ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও মাঠপর্যায়ে কোন বাস্তব সাফল্য নেই; উল্টো দেখা যাচ্ছে কাগজে সফলতার গল্প।
যাদের নামে বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দেখানো হয়েছে তারা নিজেরাই জানেন না কীভাবে এবং কেন তাদের নাম তালিকায় এলো। যদি প্রকল্পে প্রকৃত কৃষকই অংশগ্রহণ না করেন, ঘাস চাষ কোথায় হবে? আর যারা সামান্য প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তাদের তদারকি, তথ্য সংগ্রহ বা ফলাফল মূল্যায়নের উদ্যোগও নেই।
এটা নিছক প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, বরং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই মাঠপর্যায়ে কাজ মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। প্রকল্প ব্যয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকের প্রকৃত অবস্থা, প্রকল্পে তালিকাভুক্তদের সত্যতা এবং বাস্তব উপকারভোগীর সংখ্যা নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন আছে।
আমরা মনে করি, হাওরাঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হলে শুধুমাত্র কাগজে পরিকল্পনা যথেষ্ট নয়, অভিজ্ঞতা, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু এবং স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। নেপিয়ার বা হাইব্রিড ঘাস চাষের মতো উদ্যোগ সফল করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন জমির উপযোগিতা, মৌসুমী পানি ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ প্রযুক্তির ক্ষমতা এবং কৃষকের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর দাবি সরল- কাগজে নয়, বাস্তবে সফল প্রকল্প চাই। প্রাণিপুষ্টি উন্নয়নের নামে কোটি টাকার প্রকল্প কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকলে তার দায় শুধু বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নয়, তদারকির ব্যর্থতাও সমানভাবে প্রযোজ্য।
আমাদের প্রত্যাশা- ভবিষ্যতের যে কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাস্তবতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে হাওরবাসীর জন্য কার্যকর উন্নয়ন নিশ্চিত করা হোক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

সম্পাদকীয়